আজ যে পশ্চিমা দুনিয়া বিজ্ঞানের জয়গান করে তার মুলে কি ছিল? নাস্তিকতা বিজ্ঞানের উপর ভরে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রতি আঙ্গুলি তুলছে, সেই বিজ্ঞান কার দান কোথা থেকে এল? তা জানতে ধারা-বাহিকভাবে লেখা ৪ টি পর্বে The Origin Of Science -(বিজ্ঞানের উৎপত্তি) পড়ুন। লেখাটি ইনফোটেকলাইফের নিজস্ব নয়। এটি সর্ব প্রথম প্রকাশিত হয় http://askislambd.weebly.com
তৃতীয় পর্ব পড়ুন
গ্যালিলিও গ্যালিলাই :-
The Father of Modern Science , গ্যালিলিও গ্যালিলাই ১৫৬৪ সালে ইতালির পিসাতে জন্মেছিলেন। আধুনিক বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদান অনেক। গ্যালিলিও বিজ্ঞানের Experimentation পদ্ধতির প্রচার করেছিলেন এবং তার পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারাই পরবর্তীতে বিজ্ঞান জগতে Experimentation Method এর আগমন ঘটে। গ্যালিলিও হাইপোথিসিসের উপর Experiment করে সেই হাইপোথিসিসকে কিভাবে শক্তিশালী করতে হয় সেটা দেখিয়েছিলেন।গ্যালিলিওর যুগে কোপার্নিকাস এর Heliocentric Theory হাইপোথিটিক্যাল স্টেজে ছিল। কোপার্নিকাসের থিওরিকে প্রথম পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন গ্যালিলিও। টেলিস্কোপের দ্বারা সৌরজগত পর্যবেক্ষণ করে তিনি কোপার্নিকাসের থিওরির সত্যতা প্রমাণ করেন। মূলত গ্যালিলিও Hermes Trismegistus এর এই কথাটাকে প্রমাণ করেছিলেন--
"For the sun is situated at the centre of the cosmos, wearing it like a crown." [ Corpus Hermeticum , Treatis XVI ]
হ্যাঁ এটা সত্য যে গ্যালিলিও সরাসরি Hermes এর কথা উল্লেখ করেনি যেমনটা ব্রুনো ,কোপার্নিকাস ও নিউটন করেছেন। এর কারণও আছে। ১৬০০ সালে গ্যালিলিওর বয়স যখন ৩৬ ছিল তখন ব্রুনোকে পাবলিকলি আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় । চার্চ পাবলিকলি এই কাজ করেছিল যাতে কোন ফিলোসফার কিংবা বিজ্ঞানী ব্রুনোর মত কথাবার্তা না বলে। অর্থাৎ ব্রুনোর মৃত্যুর পর Hermes কে নিয়ে কথা-বার্তা বলা একেবারে ট্যাবু হয়ে যায়।
এইজন্য ব্রুনোর দ্বারা ইন্সপার্য়াড হওয়া সত্ত্বেও গ্যালিলিও তার প্রথম বইয়ে ব্রুনোর নাম উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনি আর এই কারণে কেপলার গ্যালিলিওর সমালোচনাও করেছিলেন।
গ্যালিলিও যে ব্রুনোর দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন সেটা গ্যালিলিওর Dialogue Concerning the Two Chief World Systems বইটা দেখলে বুঝা যায় । এই বইটার সাথে ব্রুনোর The Ash Wenesdayর মিল আছে। আর গ্যালিলিও তার এই বইয়ের কারণেই চার্চের ক্রোধের মুখে পড়েন।
এছাড়া গ্যালিলিও Hermeticist দের উঠা-বসা করত , একজনের সাথে তো খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল । সে ব্যক্তির নাম হল Giovanni Domenico Campanella । Campanella ও ব্রুনো একই পথে পথিক ছিলেন । তাই এই দুইজনের দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তি Hermetica সম্পর্কে অবশ্যই ভালভাবে জেনেছিলেন। গ্যালিলিও এর ব্যতিক্রম নয়।
ব্রুনো যখন Giordanisti নামের গুপ্ত সংঘ প্রতিষ্ঠা করে জোরেশোরে Hermeticism প্রচার করছিল তখন গ্যালিলিও ব্রুনোর এই কাজ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। প্রশ্ন হল- গ্যালিলিও কি এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন? ড্যান ব্রাউনের "Angels and Demons" বইতে ব্রাউন গ্যালিলিওকে 'Illuminati' সদস্য বলেছেন কিন্তু এটা ভুল তথ্য। এই কারণে ব্রাউনের "Angels and Demons" বইটা সমালোচিত হয়েছিল । The Da vinci code বইটাও হিস্টোরিকাল একুরেসির অভাবে সমালোচিত হয়েছিল।
তবে হ্যাঁ ব্রাউন যদি 'Illuminati'র বদলে 'Giordanisti'র কথা বলত তাহলে হয়ত তার বই সমালোচনা এড়াতে পারত কারণ গ্যালিলিওর যুগে 'Giordanisti'র অস্তিত্ব ছিল , 'Illuminati'র ছিল না।
গ্যালিলিওর 'Giordanisti' র সদস্য হওয়ার পক্ষে তেমন কোন শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না । কিন্তু এটা সত্য যে গ্যালিলিও ব্রুনোর চিন্তা-ভাবনা দ্বারা তীব্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা কিনা ইউরোপের বিজ্ঞান বিপ্লবের ক্ষেত্রে Hermes এর কৃতিত্বকেই স্বীকৃতি দেয়।
স্যার আইজাক নিউটন :-
গ্যালিলিওর মৃত্যুর সালেই (১৬৪২) ইংল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন আইজাক নিউটন। । কৃষকের ছেলে হওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন যে নিউটনও কৃষকই হবেন কিন্তু ক্যামব্রিজড থেকে পাশ করা নিউটনের এক আংকেল তাকে এক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এর মাধ্যমে জ্ঞানের পথে যাত্রা শুরু হয় নিউটনের।
Trinity College এ পড়াশুনা করলেও নিউটন খ্রিস্টানদের 'ট্রিনিটি'তে বিশ্বাস করতেন না । ব্রুনোর মত নিউটনও বুঝতে পেরেছিলেন যে খ্রিস্টান ধর্মকে বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। এইজন্য হয়তো অন্যান্য ফিলোসফির প্রতি নিউটনের বেশি আগ্রহ ছিল।
Alchemy র প্রতি নিউটনের অনেক বেশি আগ্রহ ছিল । Alchemy কে বিজ্ঞান থেকে বিচ্যুত শাখা বলে গণ্য করা হয়। কারণ Alchemy তে কেমিস্ট্রির আলোচনার সাথে সাথে ম্যাজিক নিয়েও অনেক আলোচনা আছে। Alchemy নিয়ে গবেষণা করার জন্য Alchemist দের "Divine Scripture" গুলো ঘাটতে হত । নিউটনও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।
নিউটনের মৃত্যুর পর নিউটনের পারসোনাল লাইব্রেরিতে Alchemy কে নিয়ে লেখা ১৬৯টি বই পাওয়া গিয়েছিল। নিউটনও Alchemy র উপর অনেক লেখা লিখেছিলেন। ইংল্যান্ডের জন্য লজ্জার বিষয় হল যে নিউটনের এই লেখাগুলো ইহুদিদের "Jerusalem National Library" তে আছে। নিউটনের এই লেখাগুলো সাংকেতিকভাবে লেখা যার সবগুলো এখনো Decode করা সম্ভব হয় না বরং এখনো হয়তো Decoding এর কাজ চলছে। নিউটন ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করায় Hermes এর নাম উল্লেখ করতে তিনি দ্বিধান্বিত হননি । নিউটন তার Alchemical লেখাগুলো Hermes এর নাম প্রায়ই উল্লেখ করেছেন। এমনকি নিউটন Hermes এর "Emerald Tablet" এর ব্যাখ্যাও লিখেছেন ।(গুগলে সার্চ দিলে পাবেন।)
নিউটন যে Hermeticism দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন তা 1966 সালে জনসম্মুখে তুলে আনেন "Leeds University"র দুইজন লেকচারার 'J.Edward McGuire' এবং 'Piyo M. Rattansi' ।
Indiana Universityর প্রফেসর Richard Westfall নিউটনের Hermeticism সম্পর্কে বলেছেন--
"In Newton , peculiarly Hermetic notions fostered the crucial development of his scientific thought." [Newton and Hermetic Tradition by Richard Westfall , Page-185-6]
নিউটন তার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য Corpus Hermeticum এর সাহায্য নিয়েছিলেন- এটা সত্য কিন্তু তার মানে এই না যে নিউটন বুদ্ধিমান ছিলেন না। তিনি অবশ্যই একজন Genious ছিলেন কারণ Hermetica থেকে তথ্য নিংড়ে বের করার জন্যও ইন্টিলেকচুয়াল পাওয়ার ভাল থাকতে হয় ।
শেষকথা :-
Hermes বা ইদরীস (আঃ) না থাকলে বিজ্ঞানের অবস্থা কি হত তা Lynn Picknett এর এই কথা দিয়ে বুঝা যায়--
" It is universally acknowledged that if the Principia (Newton's book) had never been written , our modern technological world would not exist. But without the Hermetica , Newton would never have written the Principia."
[The Forbidden Universe by Lynn Picknett, Chapter-06]
গত পর্বগুলোর সাথে সাথে এই পর্বটা যারা ভালভাবে পড়েছেন তারা আশা করি দ্বিধাহীনভাবে মেনে নিবেন যে বিজ্ঞানের প্রকৃত অরিজিন হল ডিভাইন। নাস্তিকরা বিজ্ঞান নিয়ে অনেক বাহাদুরি করলেও বিজ্ঞানের ডিভাইন অরিজিন নিয়ে কোন কথা বলে না , এরা হয়তো জানেই না Hermes এর ব্যাপারে।
No comments:
Post a Comment