আমাদের জাতীয় পতাকা তৈরী ও ব্যবহারের নিয়ম যা না জানলেই নয়! - জীবন গড়ি প্রযুক্তির সুরে ♫

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

আমাদের জাতীয় পতাকা তৈরী ও ব্যবহারের নিয়ম যা না জানলেই নয়!

আমাদের জাতীয় পতাকা তৈরী ও ব্যবহারের নিয়ম যা না জানলেই নয়!

Share This
প্রথমেই বলে রাখি এই লেখাটি আমার নিজের লেখা নয়, লেখাটি ফেসবুকে  প্রকাশিত হয়েছিল। কেন জানি মনে হল এটি আমাদের জানা দরকার তাই বিবেকের দায় থেকে এটি আমার ব্লগে পাবলিশ করলাম। আপনাদের কাজে আসলেই আমাদের স্বার্থকতা। 
খুব কম দেশই আছে যারা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছে। বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। আমরা যদি বিশ্বের ইতিহাস ঘাটি তাহলে দেখব বেশির ভাগ দেশ তাদের ঔপনিবেশিক প্রভুদের কাছে দেন-দরবার করে স্বাধীনতা পেয়েছে। আমাদের ভারতবর্ষেও অবস্থাটা মোটামুটি এই রকমই। প্রায় দু'শ বছর ব্রিটিশদের অধীনে থাকার পরে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। ভারত ও পাকিস্তান নামক দু'টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আর এই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের পূর্ব অংশই পরবর্তীতে পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদান আর দু'লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রবের বিনিময়ে পাই স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধটা সাড়ে নয় মাসের হলেও পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের যে সংগ্রাম সেটা মোটামুটি তেইশ বছরের। এই ধারাবাহিক সংগ্রামে আমরা হারিয়েছি অনেককেই। মুক্তিকামী জনতা অকাতরে প্রান দিয়েছেন, মা-বোনেরা হয়েছেন ধর্ষিতা। হাজার-হাজার রাজনৈতিক কর্মী এ সময় জেলে গিয়েছেন। অনেককে জেলে হত্যা করা হয়েছে নিষ্ঠুরভাবে। ক্ষতির পরিমাণটা অনেক। এই যে এত ক্ষতি, এত প্রাণদান এর বিনিময়ে আমরা কি পেয়েছি ?

পেয়েছি একটা দেশ, একটা মানচিত্র, একটা পতাকা। নিজের একটা পরিচয়। কিন্তু আমরা কি আমাদের সেই দেশ, মানচিত্রের কিংবা পতাকার সঠিক সম্মান দিয়েছি বা দিচ্ছি। প্রতিনিয়ত উঠতে বসতে আমরা আমাদের পতাকার অপমান করছি নিজেদের অজান্তেই। এর কারণ আমাদের অবহেলা, আমাদের জ্ঞানের অভাব। সবাই যে করছি তা নয়। তবে বেশির ভাগ মানুষই করছি। কিন্তু আর কত, এসব তো বন্ধ হওয়া দরকার। যে জাতি তার পতাকাকে সম্মান দিতে জানে না, সে জাতির উন্নতি অসম্ভব। দেশপ্রেমের প্রথম ধাপ হিসেবে আসুন নিজের পতাকাটাকে ভালোবাসি।

বাংলাদেশের পতাকা সম্পর্কে কিছু তথ্য

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকার প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। পতাকার নকশা প্রথম তৈরী করেন শিব নারায়ন দাস, ইউসুফ সালাউদ্দিন এবং সানাউল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলে ৪০১ নং কক্ষে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয় ২রা মার্চ, ১৯৭১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়। উত্তোলন করেন তৎকালীন ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব। এরপর পল্টনের জনসভায় শেখ মুজিবের উপস্থিতিতে ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ প্রথম জাতীয় সংগীত "আমার সোনার বাংলা" এর সাথে পতাকা উত্তোলন করেন। শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন তার ধানমন্ডিস্থ বাসায় ২৩শে মার্চ, ১৯৭১। এদিনই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। একই বছর ১৮ই এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনারের প্রধান জনাব এম. হোসেন আলী বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এটি দেশের বাইরে প্রথম কোথাও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘটনা।

স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় এবং এর কিছুদিন পর পর্যন্ত জাতীয় পতাকার লাল বৃত্তের মাঝে সোনালী রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল। এখনকার পতাকার রঙ গাড় সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত। এই রঙ দু'টিরও বিশেষ তাৎপর্য আছে। লাল রঙের ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক। উজ্জ্বল ঘন সবুজ তারুণ্যের উদ্দিপনা ও বিস্তৃত গ্রাম-বাংলার প্রতীক।

জাতীয় পতাকা তৈরীর নিয়মাবলী এবং মাপ

ক) জাতীয় পতাকা হতে হবে আয়তাকার আকৃতির।

খ)জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত হবে ১০:৬।

গ)জাতীয় পতাকার লাল বৃত্তটির ব্যসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

ঘ)জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্যকে সমান দশ ভাগে ভাগ করতে হবে এবং প্রস্থকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগকে এক ইউনিট ধরতে হবে।

ঙ) পতাকার দৈর্ঘ্যের ডানদিকে সাড়ে পাঁচ ইউনিট এবং বামদিকে সাড়ে চার ইউনিট রেখে একটি লম্ব টানতে হবে এবং প্রস্থকে সমান দুইভাগে ভাগ করে টানতে হবে একটি সমান্তরাল সরলরেখা। এই দু'টি রেখার সংযোগস্থলই হবে পতাকার লাল বৃত্তটির কেন্দ্র।

সরকারী ও বেসরকারী ভবনের জন্য সরকার অনুমোদিত পতাকার মাপ


এক্ষেত্রে তিনটি মাপ সরকার অনুমোদিত সেগুলো হলঃ

১) দৈর্ঘ্য ২.৫ ফুট,প্রস্থ ১.৫ ফুট; লাল বৃত্তের ব্যসার্ধ ৬ ইঞ্চি।

২)দৈর্ঘ্য ৫ ফুট, প্রস্থ ৩ ফুট; লাল বৃত্তের ব্যসার্ধ ১ ফুট।

৩) দৈর্ঘ্য ১০ ফুট, প্রস্থ ৬ ফুট; লাল বৃত্তের ব্যসার্ধ ২ ফুট।

মোটর গাড়িতে ব্যবহৃত জাতীয় পতাকার মাপ


১)দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৬ ইঞ্চি; লাল বৃত্তের ব্যসার্ধ ২ ইঞ্চি।

২)দৈর্ঘ্য ১৫ ইঞ্চি, প্রস্থ ৯ ইঞ্চি; লাল বৃত্তের ব্যসার্ধ ৩ ইঞ্চি।

এটি খুবই গুরুত্বপূ্র্ণ একটি বিষয়। ইদানিং একদল গাড়িওয়ালা মানুষ দেখা যায় যারা গাড়ির বনেটে পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারা হয়তো মনে করে এতে দেশপ্রেম প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ এতে করে আরো দেশকে অপমান করা হচ্ছে। তার উপর এভাবে পতাকা লাগানোর কারনে পতাকার স্বাভাবিক আকৃ্তি বিকৃ্ত হচ্ছে। তাই মোটরগাড়িতে পতাকা লাগানোর ক্ষেত্রে আমাদের অধিকতর সচেতন হওয়া জরুরী।

জাতীয় পতাকার মর্যাদা সংরক্ষনে করনীয়

  • জাতীয় পতাকার প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে।
  • কোনো যানবাহন, রেলগাড়ি কিংবা নৌকার আচ্ছাদনের উপরিভাগ কিংবা পশ্চাতভাগ পতাকা দ্বারা আবৃত করা যাবে না।
  •  জাতীয় পতাকাকে কোনক্রমেই কোনকিছুর আচ্ছাদনরুপে ব্যবহার করা যাবে না। তবে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় কিংবা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাহিত করা হলে শবাধার আচ্ছাদনের ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • অন্যান্য রাষ্ট্রের পতাকার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা যুগপৎ ওড়ানো হলে জাতীয় পতাকার স্বকীয় মর্যাদা বজায় রাখতে হবে।
  • যদি দু'টি পতাকা ওড়ানো হয় তবে বাংলাদেশের পতাকা ডানদিকে থাকবে।
  • দুয়ের অধিক বেজ়োড় সংখ্যার পতাকা ওড়ানো হলে বাংলাদেশের পতাকা মধ্যস্থলে থাকবে এবং সমসংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা ডানদিকে প্রথমেই থাকবে।
  • দেয়ালের গায়ে আড়াআড়িভাবে স্থাপিত দন্ডে বিভিন্ন পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকা প্রদর্শিত হলে পতাকা আড়াআড়িভাবে স্থাপিত পতাকাগুলোর ডানদিকে থাকবে (অর্থ্যাৎ দর্শনকারী ব্যক্তির বামদিকে) এবং বাংলাদেশের পতাকার দণ্ডে অন্য কোনো পতাকা থাকবে না।
  • সারিবদ্ধ মিছিলের ক্ষেত্রে, সারির মধ্যস্থলে অথবা ডানদিকে জাতীয় পতাকা থাকবে। 
  • অন্য কোন দেশের পতাকার সাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবার প্রথমে উত্তোলন করা হবে এবং সবার শেষে নামানো হবে।
  • জাতীয় পতাকা কবরে নামানো যাবে না কিংবা মাটিতে রাখা যাবে না।
  • কোন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি জাতীয় পতাকা নোয়ানো যাবে না।
  • জাতীয় পতাকা এমনভাবে উত্তোলন, প্রদর্শন, ব্যবহার কিংবা সংরক্ষন করতে হবে যাতে সহজেই নোংরা বা নষ্ট না হয়। 
  • জাতীয় পতাকার নিচে ভূমি বা পানি যেন সংস্পর্শে না আসে।
  • কোনোকিছু গ্রহন, ধারণ, বহন কিংবা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকাকে কখনোই আধার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
  • জাতীয় পতাকা জীর্ণ বা অনুপযোগী হয়ে পড়লে মর্যাদার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে, সম্ভব হলে সমাহিত করতে হবে।
  • জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন ও নামাতে হবে।
  • আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীতের সাথে উত্তোলন করতে হবে।। যখন জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে এবং পতাকা উত্তোলিত হবে তখন উপস্থিত সবাই জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে থাকবে।
  • গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতিত জাতীয় পতাকা অর্ধনর্মিত রাখা যাবে না।
  • জাতীয় পতাকা অর্ধনর্মিত রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকা প্রথমে দন্ডের শীর্ষস্থান পর্যন্ত উড়াতে হবে, এরপর অর্ধনর্মিত করা হবে। আবার পতাকা নামানোর সময় পুনরায় শীর্ষস্থান পর্যন্ত তুলতে হবে তারপর নামাতে হবে।

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়

  • সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড্ডীন থাকবে। তবে মোটরগাড়ি, জলযান, এবং বিমানের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। সংসদের রাত্রিকালীন অধিবেশন, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর বা মন্ত্রীপরিষদের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের মত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সময় রাতের বেলায় ভবনসমূহের উপর জাতীয় উড্ডীন থাকবে।
  • মোটরগাড়িতে পতাকা লাগানোর সময় দন্ড দৃড়ভাবে চেসিসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে কিংবা রেডিয়েটর ক্যপে বাঁধতে হবে।
  • জাতীয় পতাকার উপর কোনকিছু লেখা কিংবা মুদ্রন করা যাবে না অথবা কোন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কিছু আঁকা যাবে না
এই যে আমাদের দেশটা এতকিছুর পরও টিকে আছে সেটা মূলত এদেশের মানুষের দেশপ্রেমের জোড়েই। কিন্তু দিন দিন আমাদের দেশপ্রেম কমে যাচ্ছে। আমরা প্রচন্ড হতাশ একটা জাতিতে পরিণত হচ্ছি। এই অবস্থায় আমাদের জাতীয় পতাকাই আমাদের আশাবাদী করতে পারে। আমরা যদি প্রতিদিন একবার করে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে শপথ করি এই দেশটার জন্য কিছু না কিছু করব, প্রতিদিন অন্তত একটা ভালো কাজ করব। তাহলে হয়তো গোটা দেশটা বদলাবে না, কিন্তু আমি আপনি বদলাব। সেটাই বা কম কিসে ?

আসুন সঠিক মাপ দিয়ে নিজে একটা জাতীয় পতাকা তৈরী করি। আপনার আশেপাশে সবাইকে সঠিক মাপ দিয়ে সঠিক নিয়মে পতাকা তৈরীতে এবং ওড়াতে উদ্বুদ্ধ করি। আপনার শিক্ষক, ছাত্র, চিকিৎসক, যিনি আপনার জন্য কাজ করেন, আপনার অফিসের সহকর্মী সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুন।

No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages